ইসলামে মদ খাওয়া ও জুয়া খেলার শাস্তি
জুয়া খেলার শাস্তি
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন: হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, দেবতার নামে বলি দেওয়া ও লটারি দ্বারা ভাগ্য গণনা শয়তানের নোংরা কাজ। এসব থেকে দূরে থাকো, তাহলে তোমরা সফল কাম হবে। মত জুয়ার মধ্য দিয়ে শয়তান তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে ও নামাজ থেকে তোমাদের ফিরিয়ে রাখতে চাই তোমরা কি বিরত থাকবে? সূরা আল মায়েদা।
যেকোনো ধরনের জোয়াই এই আয়াতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, চাই তা দাবা, তাস পাশা গুটি অথবা অন্য কোন জিনিসের দ্বারা খেলা হোক না কেন। এটা আসলে অবৈধ পন্থায় মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ ও লুণ্ঠ করার আওতাভুক্ত। যাকে আল্লাহ তাআলা সূরা আল বাকারার এই আয়াতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেনঃ “তোমরা পরস্পরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় খেয়ো না” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এক হাদীসে বলেন, কিছু অন্যায় ভাবে মানুষের সম্পদে হস্তক্ষেপ করে। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব। সহীহ আল বুখারী। অপর এক হাদীসে আছে রাসুল (সা) বলেছেন “ কেউ যদি এরূপ প্রস্তাব বা দাওয়াত দেয় যে, তোমার সাথে জুয়া খেলব, তবে তার গুনাহ মাপের জন্য সদকা করা উচিত” বস্তুত জুয়া সমন্ধে শুধু কথা বলেই যদি সদকা, কাফফারা দিতে হয়, তবে কাজ করলে কি পরিণতি হতে পারে তা ভেবে দেখুন তো।
জুয়ার মধ্যে আর্থিক হার-জিত না থাকলে খেলা জায়েজ কি?
তাস ও দাবা ইত্যাদি খেলা যদিও আর্থিক হার জিত থেকে মুক্ত হয় এবং তিক্ত বিনোদনমূলক হয়, তবে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে হালাল আবার কেউ কেউ হারাম বলেছে। কিন্তু আর্থিক হারজিত যুক্ত থাকলে তা যে হারাম সে ব্যাপারে সকল মাযহাবের আলেম ও ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
জুয়া খেলা হারাম হওয়া সম্পর্কে ইমামগণ এক মত হয়েছে। কেননা রাসূল (সা) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে যেন নিজে হাতকে রক্তের মধ্যে ডুবিয়ে রঞ্জিত করল” সহীহ আল বুখারীর বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা) বলেন “ যে ব্যক্তি পাশা খেলে সে আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানি করে” হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন পাশা খেলা এক ধরনের জুয়া এবং তা শুকরের চর্বি দিয়ে পালিশ করার মত হারাম কাজ” দাবা খেলা অধিকাংশ আলেম এর মতে হারাম, তাই তাকে কোন কিছু বন্ধক রাখা তোতা আর্থিক হার-জিতের বাধ্যবাধকতা থাক বা না থাক। তবে বন্ধ রাখা এবং হেরে যাওয়া খেলোয়াড়ের বন্ধক বাজে প্রাপ্ত করার ব্যবস্থা, অন্য কথায় আর্থিক হারজিত যুক্ত থাকলে তা সর্বসম্মত ভাবে হারাম। যুক্ত না থাকলেও অধিকাংশ আলেম এর মধ্যে দাবা খেলা হারাম। কেবলমাত্র ইমাম শাফি একে হালাল মনে করেন শুধু এই শর্তে যে, তা ঘরোয়াভাবে খেলা হবে এবং নামাজ কাজা অথবা অন্য কোন ফরজ ফরজ ওয়াজিব বিনষ্ট হওয়ার কারণ হবে না। ইমাম নবাবী ইমাম শাফি এই মত অনুসারে ফতোয়া দিতেন। সেই সাথে তিনি পারিশ্রমিক বা পুরস্কারের বিনিময়ে দাবা খেলাকে জুয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে রায় দেন।
দাবা খেলা কি হারাম
যে সমস্ত আলেম দাবা খেলাকে হারাম বলেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু বলেন সাতরানত বা দাবা হল অনারবদের জুয়া। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু একদিন দাবা খেলারওতো একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেখে বললেনঃ তোমরা যা নিয়ে এরূপ ধ্যানে মগ্ন আছো এটি কি? এগুলো স্পর্শ করার চেয়ে জ্বলন্ত আগুন স্পর্শ করা ভালো। আল্লাহর কসম তোমাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করা হয়নি। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আরো বলেনঃ দাবারুর ন্যায় মিথ্যাবাদী আর কেউ নেই, সে বলে আমি হত্যা করছি। অথচ সে হত্যা করেনি, সে বলে ওটা মরেছে। অথচ কোন কিছুই মরিনি।
আরো জানতে> টয়লেট এ প্রবেশের দোয়া
হযরত আবু মুসা আশরাফি রাদিয়াল্লাহু বলেনঃ গুনাগার ব্যক্তি ছাড়া কেউ দাবা খেলে না। ইমাম ইসহাক কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, দাবা খেলাতে আপনার মতে আপত্তি আছে? তিনি বললেনঃ দাদা পুরোপুরি আপত্তিকর। তাকে বলা হলো, দুর্গের সৈন্যরা যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দাবা খেলে। তিনি তাকে জবাব দিলেন এটি গুনাহর কাজ। মোহাম্মদ খেলা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন। দাবা খেলার নিম্নতম ক্ষতি এই যে, কেয়ামতের দিন বাতিলপন্থীদের সাথে সমবেত হবে।
হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু দাবাকে পাসার চেয়েও খারাপ এবং ইমাম মালিক দাবাকে পাসার সমপর্যায়ে এবং উভয়ে এই দুটিকে হারাম বলেছেন। ইমাম মালেক আরো বলেন। আমি শুনেছি যে, হযরত ইবনে আব্বাস জৈনিক এতিমের সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি ওই সম্পত্তিতে দাবা খেলার সরঞ্জাম্পে তা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। দাবা খেলা বৈধ হলে এতিমের সম্পত্তির এই ক্ষতিসাধন তার দ্বারা সম্ভব হতো না। হারাম বলেই তিনি এ কাজ করতে পেরেছিলেন। যেমন কোন ইয়াতিমের সম্পত্তিতে মদ থাকলে তা ঢেলে ফেলা ওয়াজি। ইব্রাহিম না দাবা একটি অভিশপ্ত খেলা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “ আল্লাহ তা'আলা প্রতিদিন তার সৃষ্টির প্রতি 360 বার রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। যে দাবা খেলে, সে এর একটি দৃষ্টিও পায় না” হযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ দাদা পাশা ও অন্যান্য অলসতা সৃষ্টিকারী খেলায় নিমগ্ন লোকদের কাজ দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিও না। কেননা তারা যখন খেলায় মত্ত হয়, তখন শয়তান তার দলবল নিয়ে তাদের মাঝে সমবেত হয়। যখনই কেউ খেলা ছেড়ে চলে যায়, শয়তান তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। কেননা শয়তান ও তার দলবল তাকে ঘৃণা করে, যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায় তখন তারা মরা জন্তুর লাশ খেয়ে পেট ভরা কুকুরের মত চলে যায়। ওপরে এক হাদিসে রাসুল (সা) বলেছেনঃ দাবার ওরা কিয়ামতের দিন কঠিন আযাব ভোগ করবে।
No comments
Post a Comment